খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে নিখোঁজ হওয়া মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা খাতুনকে (৫৫) ফরিদপুরের বোয়ালমারি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। বোয়ালমারিতে আসার আগে চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জে ছিলেন তিনি। উদ্ধারের পর শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘খুলনার গৃহবধূ রহিমা খাতুন কেন, কি কারণে নিখোঁজ ছিলেন- আমরা এখনও তা জানতে পারিনি।
কারণ পুলিশ হেফাজতে আনার পর থেকেই তিনি আর কথা বলছিলেন না। তবে তাকে পাওয়া যাওয়া বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, রহিমা খুলনা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যান। সেখান থেকে ফরিদপুরের বোয়ালিয়ায় কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আসেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘রাতে রহিমা কিছু খেতে চাননি। এখন কোনো কথা বলছেন না, ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ যখন বোয়ালিয়ার কুদ্দুসের বাড়িতে পৌঁছে তখন রহিমা সেখানে কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে গল্পে মেতে ছিলেন। পুলিশ দেখার পরই তিনি নির্বাক হয়ে যান। এ সময় কুদ্দুস বাড়িতে ছিলেন না। তাই কুদ্দুসের স্ত্রী ও ছেলে এবং ভাইয়ের বউকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রহিমা তাদেরকে এখানে আসার কারণ কী বলছে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা তেমন কিছুই জানাতে পারেননি। তারা রহিমার কাছে এ সব জানার চেয়ে সাবেক বাড়িওয়ালাকে সেবাযত্ন করতে বেশি তৎপর ছিলেন। ’
‘গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত ৭ দিন রহিমা এ বাড়িতে ছিলেন। রহিমা তাদেরকে জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ও চট্টগ্রাম ঘুরে তিনি ফরিদপুরে এসেছেন। রহিমার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় থাকায় তারা তেমন কোনো সন্দেহও করেননি। আর রহিমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গেও কথা বলেননি,’ যোগ করেন পুলিশের এই উপকমিশনার।
মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রহিমা বেগম যেহেতু অপহরণ মামলার ভিকটিম, সে জন্য আপাতত তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখা হচ্ছে। সেখানে খাওয়াদাওয়া, সেবাশুশ্রূষার ব্যবস্থাপনা আছে। পরে হয়তো পিবিআই চাইলে তাকে হস্তান্তর করা হবে। ’
এ দিকে অপহরণের অভিযোগে প্রতিবেশীদের হয়রানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রহিমার আত্মগোপনে থাকার ঘটনা অপহরণ দাবি করে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলার হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী আসামিদের পরিবার।
আত্মগোপনে থেকে অন্যদের হয়রানির ঘটনায় পরিবারের কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও শাস্তি দাবি করেছেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ আল সাদি। তিনি বলেন, ‘যদি আমার পরিবারের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক। ’
গত ২৭ আগস্ট রাতে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন রহিমা খাতুন। এর পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন সন্তানেরা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ দিকে শুক্রবার গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে রহিমা বেগমের মেয়েরা ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ ‘নিজেদের মায়ের লাশ’ দাবি করলে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরনের কাপড় দেখে প্রাথমিকভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে জানান রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তবে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন উদ্ধার হওয়া নারীর লাশ অর্ধগলিত ছিল দাবি করে লাশের ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।